দারুচিনি । ব্যাবহার ও উপকারিতা
পরিচিতিঃ দারুচিনি এর ব্যাবহার ও উপকারিতা
প্রতিদিনের খাবারের একটি অতি প্রয়োজনীয় মসলার নাম দারুচিনি। ইংরেজীতে একে Cinnamon বলা হয়। দারুচিনির বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomus Zeylanicum . দারু অর্থ বৃক্ষ বা গাছ আর এটির স্বাদ মিষ্টি বিধায় এর নাম হয়েছে দারুচিনি। এটি একই নামের গাছের বাকল থেকে উৎপন্ন হয়। দারুণ মিষ্টি স্বাদ এবং চমৎকার সুগন্ধ একে দিয়েছে অনন্য স্থান।
তবে কেবল মসলাই নয়, এর রয়েছে আরও বিভিন্ন গুনাগুন। আজকে আমাদের আর্টিকেলের মূল আলোচ্য বিষয় এই দারুচিনির উপকারিতা ও ব্যাবহার।
দারুচিনি এর ব্যাবহার
আমাদের দেশে দারুচিনির ব্যাবহার খাবারে মসলা হিসেবে এবং ভেষজ ঔষধ হিসেবে। নিম্নে এর কিছু ব্যাবহার নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
১. মসলা হিসেবেঃ উপমহাদেশিয় রেসিপি বা রন্ধন প্রনালিতে সরাসরি অথবা গরম মসলার একটি উপাদান হিসেবে। মাছ-মাংস সহ বিভিন্ন তরকারিতে এটি ব্যাবহৃত হয়।
২. ওষুধ হিসেবেঃ দারুচিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ হিসেবেও ব্যাবহৃত হয়। আয়ুর্বেদিক ও চাইনিজ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের অসুখের চিকিৎসায় এটি ব্যাবহৃত হয়।
৩. রূপচর্চায়ঃ দারুচিনি প্রাকৃতিক রূপচর্চার একটি অন্যতম অনুষংগ। এর গুড়ো এবং তেল রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়।
দারুচিনির উপকারিতা
দারুচিনির রয়েছে পরীক্ষিত ও প্রমানিত অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১. মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দারুচিনির তুলনা নেই। দারুচিনিতে থাকা সিনামিনিক এসিড মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে। গোটা দারুচিনি বা দারুচিনির চুয়িং গাম এক্ষেত্রে বেশ উপকারি।
২. সর্দি-কাশি উপশমেঃ দারুচিনির তেল বুকের জমা কফ, তরল করে বের করে দেয় এবং সর্দির উপশম করে।
৩. ত্বকের উপকারিতায়ঃ দারুচিনিতে বিদ্যমান এন্টি-অক্সিডেন্টস ত্বকের বলিরেখা কমায়,ব্রণ দূর করে ও বয়সজনিত ত্বকের ক্ষতি রোধ করে। মধু ও দারুচিনির গুড়োর মিশ্রণ রূপচর্চার এক অনন্য উপাদান।
আরও পড়ুনঃ
৪. রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করেঃ দারুচিনিতে উপস্থিত কুমারিন নামক উপাদান রক্তকে তরল করে এবং এন্টি-কুয়াগুলান্ট ( রক্ত জমে যাওয়া প্রতিরোধক হিসেবে) হিসেবে কাজ করে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
৫. ওজন কমাতে দারুচিনিঃ দারুচিনি ওজন কমাতে দারুন কার্যকর। মিশিগান ইন্সটিটিউট অফ লাইফ সায়েন্স পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, এতে থাকা সিনামাল্ডিহাইড চর্বি পোড়াতে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে।
৬.ডায়াবেটিস প্রতিরোধে দারুচিনিঃ গবেষণায় দেখা গেছে যে, দারুচিনি ডায়াবেটিস এর জন্য দায়ি, অক্সিডেটিভ এজেন্টগুলিকে প্রতিরোধ করে। দারুচিনিতে থাকা বিভিন্ন যৌগ ইনসুলিন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।
আরও পড়ুনঃ
৭. পেটের সমস্যা নিরসনেঃ দারুচিনি পেটের সমস্যা নিরসনে অনেক কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। দারুচিনি বায়ুনাশক এবং ক্ষুধাবর্ধক। এছাড়া দারুচিনি এসিডিটি এবং গ্যাসের সমস্যা সমাধানে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।
৮. হৃদপিন্ডের উপকারিতায়ঃ দারুচিনি রক্তে লো-ডেনসিটি কোলেস্টেরল যাকে খারাপ কোলেস্টেরলও বলে, তার পরিমান কমিয়ে হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হার্ট এটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
৯. চুলের যত্নেঃ দারুচিনিতে থাকা প্রোসিয়ানিডিন নামক উপাদান চুলের ফলিকলকে উদ্দীপ্ত করে চুলের বৃদ্ধি, চুলপড়া রোধ ও স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
আরও পড়ুনঃ
১০. জয়েন্টের ব্যাথা কমাতেঃ শরীরের জয়েন্টের বা বাতজনিত ব্যাথা কমাতে দারুচিনি ভীষণ উপকারি। দারুচিনির গুড়োর সাথে মধুর মিশ্রণ এক্ষেত্রে উপকারি।
১১. রক্তে কোলেস্টেরল কমায়ঃ দারুচিনি রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল কমায়।
১২. ব্রণ সারাতেঃ লেবুর রসের সাথে দারুচিনির গুড়ো মিশিয়ে ব্রণে লাগালে ব্রণ সেরে যায়।
আরও পড়ুনঃ
১৩. ঘুমের সমস্যা দূর করতেঃ ঘুমের সমস্যা দুর করতে দারুচিনি উপকারী। ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস গরম
দুধে দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে পান করলে ভালো ঘুম হবে।
১৪. মাসিক সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানেঃ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, দারুচিনি মাসিকের সময় হওয়া ব্যাথা, খিচুনি এবং বমিভাব কমায়।
১৫. ক্ষত সারাতেঃ দারুচিনির এন্টি-ইনফ্লামেটরি গুনাগুন কাটা -ক্ষত দ্রুত সারতে সহায়তা করে।
শেষ কথাঃ দারুচিনি । ব্যাবহার ও উপকারিতা
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিলো দারুচিনি এর ব্যাবহার ও উপকারিতা নিয়ে।আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে শেয়ার করুন আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে।আপনাদের মূল্যবান মতামত জানান কমেন্ট সেকশনে। আর নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url