পুঠিয়া রাজবাড়ি। এর ইতিহাস এবং কেন বিখ্যাত

 পরিচিতি 

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা রাজশাহির অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হচ্ছে পুঠিয়া রাজবাড়ি। রাজশাহির অন্যতম প্রাচীন এ স্থাপনার সাথে জড়িয়ে আরেক ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্ব মহারাণী হেমন্তকুমারীর নাম। এটি পাঁচআনি জমিদারবাড়ি নামেও পরিচিত।

আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য সূচি হচ্ছে এই পুঠিয়া রাজবাড়ি নিয়ে। আশা করি এ বিষয়ে জানতে এই পোস্টটা পুরোটা পড়বেন।

পুঠিয়া রাজবাড়ি কোথায় অবস্থিত

রাজশাহী জেলা সদর থেকে ৩২ কি.মি. উত্তর-পূর্বে বাঘা-পুঠিয়া জেলা সড়কের পার্শ্বে  পুঠিয়া রাজবাড়ি অবস্থিত।

পুঠিয়া রাজবাড়ি এর ইতিহাস

পুঠিয়া রাজবংশ বা জমিদার পরিবারের শেষের দিকের উত্তরাধিকারি মহারানি হেমন্ত কুমারি পুঠিয়া রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৫ সালে মহারানি হেমন্ত কুমারি এই রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার শ্বাশুরি শরৎসুন্দরি দেবির নামে উৎসর্গ করেন।

পুঠিয়া রাজবাড়ি কেন বিখ্যাত

পুঠিয়া রাজবাড়ি বিখ্যাত তার ইন্দো-ইউরোপীয় ধাঁচের মূল প্রাসাদ ভবন ও তৎসংলগ্ন শিবমন্দির এবং অন্যান্য স্থাপনার জন্য । নিম্নে এ স্থাপনাগুলি নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
মূল রাজবাড়িঃ

দোতলা রাজবাড়ি ভবনের সম্মুখে উত্তর দিকে খোলা প্রাঙ্গণের অপর পার্শ্বে রয়েছে সম্মুখভাগ ৬০ মিটার বিস্তৃত বিশাল পিরামিড আকৃতির চারতলা মনোরম দোলমঞ্চ। ভবনের পূর্ব পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে একই ধরনের দুটি সম্প্রসারিত অংশ এবং প্রায় ১৫.২৪ মিটার দীর্ঘ মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে এক বিশাল তোরণ। রাজবাড়ির সামনে .০৪ মিটার চওড়া একটানা বারান্দা থেকে পেছনের বিশাল হলঘরে প্রবেশের পথ রয়েছে। ঝুল বারান্দার ছাদটি দোতলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত তিনটি মাধুর্যমন্ডিত অর্ধ-করিনথিয়ান পলকাটা স্তম্ভের উপর স্থাপিত। কেন্দ্রীয় স্তম্ভপথটির সম্মুখস্থ উপরিভাগে ত্রিকোণাকার কারুকার্যখচিত অংশ রয়েছে এবং বৈচিত্র্যময় সূক্ষ্ম আস্তরের উদ্গত নকশা দ্বারা ছাদের প্যারাপেট সুসজ্জিত করা হয়েছে। পূর্ব পশ্চিম দিকের প্রান্তিক স্তম্ভপথের প্রশস্ত বারান্দাসমূহ চারটি পলকাটা করিনথিয়ান স্তম্ভের উপর স্থাপিত এবং স্তম্ভগুলি উপর তলার ছাদ পর্যন্ত সম্প্রসারিত।

পরিখা বা খালসমূহঃ

    পুঠিয়া রাজবাড়ির চারিদিক পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত। বর্তমানে পরিখাগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিত যথা- শিব সরোবর বা শিবসাগর, গোপালচৌকি, বেকিচৌকি, গোবিন্দ সরোবর মরাচৌকি। এছাড়া রাজবাড়ি এলাকার মধ্যস্থলে রয়েছে শ্যামসাগর নামে একটি বিশাল পুকুর। 

বড় আহ্নিক মন্দির

পুঠিয়া রাজবাড়ীর  পশ্চিমে জমিদার বাড়ীর বৃহৎ দিঘীর পশ্চিম পাশে পাশাপাশি তিনটি মন্দির আছে। এগুলোর মধ্যে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত মন্দিরটি  বড় আহ্নিক মন্দির নামে পরিচিত। উত্তর দক্ষিণে লম্বা আয়তকার পরিকল্পনায় নির্মিত তিন কক্ষ বিশিষ্ট মন্দিরের প্রবেশ পথ পূর্বদিকে অবস্থিত। এই মন্দিরের মাঝের কক্ষটির ছাদ দোচালা পদ্ধতিতে নির্মিত। দুপাশের কক্ষ দুটি বর্গাকার এবং চার চালা ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত। মন্দিরের পূর্বপার্শ্বে সম্মুখ দেওয়াল বিভিন্ন ধরণের পোড়ামাটির ফলক চিত্র দ্বারা সজ্জিত। স্থাপিত বিন্যাস অনুযায়ী মন্দিরটি খ্রিষ্টীয় ১৭/১৮ শতকে নির্মিত বলে অনুমিত হয়।

পুঠিয়া বড় শিব মন্দির

পুঠিয়া বাজারে প্রবেশ মুখেই  হাতের বাম পাশে দিঘীর দক্ষিণ পাড়ে বড় শিব মন্দির অবস্থিত। মন্দিরে উঠার জন্য দক্ষিণ দিকে সিড়ি আছে। মন্দিরের উপর চার কোণে চারটি এবং কেন্দ্রস্থলে একটি চুড়া বা রত্ন আছে। কেন্দ্রীয় চূড়াটি প্রায় বিশ মিটার উঁচু। চতুষ্কোণাকৃতির কাঠামোর উপরে পিরামিড আকৃতির চূড়াগুলো নির্মিত হয়েছে। এগুলোর চার পার্শ্বে সন্নিবেশিত রয়েছে বিভিন্ন স্তরে মোচার আকারে নির্মিত অসংখ্য ছোট ছোট চূড়া । মন্দিরের দেয়ালের বাইরের দিকে হিন্দু দেব-দেবীর  অলংকরণ ছিল। যা বর্তমানে প্রায় ধংসপ্রাপ্তমন্দিরের কেন্দ্রীয় অংশে রয়েছে বর্গাকার কক্ষ এবং চার কোণে চারটি কক্ষ। কোণের চারটি কক্ষের মধ্যবর্তী স্থানে বারান্দা সন্নিবেশিত রয়েছে। মন্দিরের কেন্দ্রীয় কক্ষে বৃহৎ আকারের শিবলিঙ্গ গৌরী পট্র রয়েছে। যাতে পূজারীরা এখনও পূজা অর্চণা করে থাকে। পুঠিয়ায় অবস্থিত মন্দিরগুলোর মধ্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি। ১৮২৩ খ্রিঃ পাঁচআনী জমিদার বাড়ীর রাণীভূবনময়ী দেবী মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দির ভূবনেশ্বর মন্দিরও বলা হয়ে থাকে।

 পুঠিয়া দোল মন্দির

    পুঠিয়া রাজবাড়ীর সম্মুখস্থল মাঠের উভয় পার্শ্বে বর্গাকার পরিকল্পনায় নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট মন্দিরে প্রত্যেক বাহুর পরিমাপ ২১.৫৪ মিটার। ইট, চুন সুড়কীর তৈরী দোল মঞ্চ মন্দিরটি ক্রমশঃ ছোট থাকে থাকে উপরে উঠে গেছে। চতুর্থ তলের উপরে আছে মন্দিরের গমবুজ আকৃতির চূড়া। চূড়ার শীর্ষদেশে ফিনিয়েল দ্বারা শোভিত। প্রত্যেক তলের চারদিকে প্রশসত টানা বারান্দা আছে। নীচতলায় প্রত্যেক বাহুতে সাতটি করে দ্বিতলের পাঁচটি, ত্রিতলের তিনটি এবং চতুর্থ তলের প্রত্যেক বাহুতে একটি করে প্রবেশ পথ আছে। পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে মন্দিরের উচ্চতা ২০ মিটার। মন্দিরটি উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে পুঠিয়ার পাঁচআনী জমিদার বাড়ীর হেমন্ত কুমারী দেবী কর্তৃক নির্মিত।

পুঠিয়া গোবিন্দ মন্দির

    পুঠিয়া পাঁচআনী জমিদার বাড়ীর অঙ্গনে অবস্থিত গোবিন্দ মন্দির। গোবিন্দ মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি। উঁচু বেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটি বর্গাকার পরিকল্পনায় নির্মিত। মন্দির গাত্রে অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক চিত্র আছে। রামায়ন, মহাভারত পৌরাণিক কাহিনীর রুপায়ন ছাড়াও ফলক চিত্রের মাধ্যমে প্রাণী উদ্ভিদ জগতের ছবিও তুলে ধরা হয়েছে। এই মন্দিরটি ১৮ শতকে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়

 শেষ কথাঃ পুঠিয়া রাজবাড়ি। এর ইতিহাস এবং কেন বিখ্যাত

আমাদের আজকের পোস্টের আলোচ্য বিষয় ছিলো পুঠিয়া রাজবাড়ি এর ইতিহাস এবং কেন বিখ্যাত। আশা করি পোস্ট পড়ে এ বিষয়ে জানতে পেরেছেন। যদি পোস্টটি আপনাদের ভাল লেগে থাকে তবে শেয়ার করুন আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর কোন মতামত থাকলে জানান কমেন্ট সেকশনে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪