লেবুর খোসার উপকারিতা ও ব্যাবহার
পরিচিতিঃ লেবুর খোসার উপকারিতা ও ব্যাবহার
লেবু অতি পরিচিত এবং সহজলভ্য একটি ফল। এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। কিন্তু লেবুর খোসাকে সাধারণত আমরা ফেলনা হিসেবেই জানি কিন্তু লেবুর খোসার (Lemon Peel) উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কয়জন জানি। লেবুর মতই লেবুর খোসাও অত্যন্ত উপকারি একটি জিনিস।
আমাদের আজকের পোস্টের আলোচ্য বিষয় লেবুর খোসার উপকারিতা ও ব্যাবহার নিয়ে । আশা করি এ বিষয়ে জানতে আমাদের পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
লেবুর খোসার উপকারিতা
বেশিরভাগ
লোকই লেবুর খোসা (Lemon
Peel) ফেলে দেন। কিন্তু এই
লেবুর খোসা যে কতটা
উপকারী এবং পুষ্টিগুণে ঠাসা
তা হয়তো অনেকেই জানেন
না। তাই লেবুর খোসা
ফেলে না দিয়ে বিভিন্নভাবে
কাজে লাগানো যায়। এমনকি লেবুর
খোসা ব্যবহার করা যায় খাবারেও। খাবারের স্বাদ বাড়াতেই শুধু নয়, লেবুর খোসার রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা।
আরও পড়ুনঃ
লেবুর খোসাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে
ভিটামিন-সি এবং ফাইবার।
ফ্যাট এবং ক্যালোরি নেই বললেই চলে। এক চামচ
বা ৬ গ্রাম লেবুর
খোসায় ভিটামিন সি থাকে ৯
শতাংশ। ক্যালরি থাকে মাত্র ৩
একক, ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
এবং ১ গ্রাম ফাইবার
থাকে। এছাড়াও থাকে বিটা
ক্যারোটিন, ফলেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। এতে
প্রোটিন এবং ফ্যাট একেবারেই
থাকে না।
আরও পড়ুনঃ
অনেকেই প্রশ্ন করেন লেবুর খোসা (Lemon Peel) খাওয়া যায় কিনা, যুক্তরাষ্ট্রের Food and Drug Administration একে নিরাপদ খাবার হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
লেবুর খোসার ব্যাবহার
কথায় বলে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা পাতিলেবু ভরসা। লেবুর শুধু রস নয় খোসারও রয়েছে অনেক ব্যাবহার, এগুলো নিচে আলোচনা করা হলো
১. হাড় মজবুত করেঃ লেবুর খোসায় (Lemon Peel) থাকা ভিটামিন-সি এবং ক্যালসিয়াম
আপনার হাড়কে মজবুত করতে এবং হাড়ের
স্বাস্থ্যগত ও গঠনগত উন্নতি ঘটাতে পারে। লেবুর খোসার এ পুষ্টি উপাদানগুলো হাড়ের আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস মতো রোগও প্রতিরোধ
করতে সহায়তা করে।
২. সংক্রমণ
প্রতিরোধ করেঃ লেবুর খোসার (Lemon Peel) রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল
ক্ষমতা, যা আপনার দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে বিভিন্ন ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ
থেকে রক্ষা করতে পারে।
৩. মুখের
স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ লেবুর খোসার আছে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল
গুণ। যেসব ব্যাক্টেরিয়ার কারণে
দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির
সংক্রমণ হয়ে থাকে সেগুলিকে
লেবুর খোসা প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষণায়
দেখা গেছে লেবুর খোসায় থাকা উপাদানসমূহ মুখের ভিতরের সংক্রমণ বা মাড়ির সমস্যা
কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ
৪. মানসিক চাপ কমায়ঃ গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুর
খোসায় থাকা সাইট্রাস বায়োফ্লাভোনয়েড স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য
করে।
৫. খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিঃ লেবুর
খোসা কুচি করে কেটে পানীয়
অথবা তরকারিতে মিশিয়ে নিতে পারেন। এর
ফলে খাবারে ভিন্ন ধরনের স্বাদ পাবেন।
৬. ওভেনের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ দীর্ঘদিন ওভেন ব্যাবহার করলে ওভেনের
ভেতরে দুর্গন্ধ হয়। এই দুর্গন্ধ দূর
করতে পারে লেবুর খোসা।
একটি বাটিতে পানি ও লেবুর
খোসা নিয়ে ওভেনে গরম
করুন। এতে এই দুর্গন্ধ সহজেই দূর হবে।
আরও পড়ুনঃ
৮. ত্বকের বলিরেখা দূর করতেঃ লেবুর
খোসা ভিটামিন-সি সহ বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে
সমৃদ্ধ। যা ফ্রি-র্যাডিকাল
দ্বারা ত্বকে বলিরেখা তৈরী হওয়া থেকে রক্ষা করে। ত্বকে তাজা
লেবুর খোসা প্রয়োগ করলে
বলিরেখা দূর হয়। বার্ধক্যজনিত
অন্যান্য লক্ষণগুলিও হ্রাস করতে সহায়তা করতে
পারে। লেবুর খোসা ব্যবহার করার জন্য,
খোসাটি পাতলা করে কেটে ত্বকে
ঘষুন। এবার
১০-১৫ মিনিটের জন্য
রেখে গরম
পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৯.চুল পড়া রোধেঃ লেবুর
খোসা চুল মজবুত করে চুল পড়া রোধ করে। চুল পড়া রোধ করতে কয়েক শতাব্দী ধরেই এর ব্যবহার
হয়ে আসছে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায়
কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। কোলাজেন এমন
একটি প্রোটিন যা চুলকে মজবুত
করে। লেবুর খোসা এবং জলপাই
তেল দিয়ে তৈরি পেস্ট মাথার
ত্বকে পুষ্টি জোগায় ও চুল পড়া রোধ করে।
১০. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ লেবুর
খোসা একটি প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট।
ত্বকের কালো দাগ দূর
করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এজন্য লেবুর
খোসা এবং মধু দিয়ে
একটি পেস্ট বানিয়ে নিন। এটি
ত্বকে লাগান। অথবা তাজা
লেবুর খোসা পিষে নারকেল
বা জলপাই তেলের সাথে মিশ্রিত করুন।
পেস্টটি মুখে বা মাথার
ত্বকে উভয় জায়গাতেই লাগাতে
পারবেন। এটি
২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
কুসুম গরম পানি দিয়ে
ধুয়ে ফেলুন। সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য পেস্টটি সপ্তাহে
দুইবার ব্যবহার করুন।
লেবুর খোসা ব্যাবহারে সাবধানতা
লেবুর খোসা
ত্বকের যত্নের জন্য একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক উপায়। তবে লেবুর খোসায় অ্যাসিডিটির
কারণে জ্বালা, লালভাবের মতো কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই এটি ব্যবহার করার
সময় সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য লেবুর খোসার প্যাচ টেস্ট করা যেতে পারে। প্যাচ টেস্ট করার জন্য সামান্য পরিমাণে ত্বকে লেবুর
খোসা প্রয়োগ করুন। এবার ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। যদি কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া না ঘটে, তবে
এটি ত্বকে ব্যবহার করা নিরাপদ।
শেষ কথাঃ লেবুর খোসার উপকারিতা ও ব্যাবহার
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিলো লেবুর খোসার উপকারিতা ও ব্যাবহার নিয়ে।আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে শেয়ার করুন আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে।আপনাদের মূল্যবান মতামত জানান কমেন্ট সেকশনে। আর নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url