পুদিনা পাতা । খাবার নিয়ম ও উপকারিতা
পরিচিতিঃ পুদিনা পাতা । খাবার নিয়ম ও উপকারিতা
পুদিনা
পাতা যা পরিচিত সুগন্ধি,
স্বাদবর্ধক, ঔষধি আরও নানান
গুণের আধার হিসেবে। পুদিনা পাতা ইংরেজিতে একে Spearmint, or spear mint বলা হয়। পুদিনা পাতা mint
leaves নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Mentha spicata. রান্নায়
স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানোর
কাজে প্রাচীন যুগ থেকেই পুদিনা পাতা ব্যবহৃত
হয়ে আসছে ।
শুধু তাই নয়, এটি
নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দূর করতেও
দারুণ কার্যকরী।
আমাদের আজকের ব্লগের আলোচ্য বিষয় পুদিনা পাতার উপকারিতা ও ব্যাবহার নিয়ে । আশা করি এ বিষয়ে জানতে আমাদের পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
পুদিনা পাতা খাবার নিয়ম
পুদিনা পাতা অনেক ভাবেই খাওয়া যায়। তবে এটি সালাদের সাথে কাঁচা বা অন্যান্য ফলের সাথে জুস করে খাওয়া যায়। এছাড়া রান্নায় সরাসরি বা খাবার সাজানোর উপাদান বা ড্রেসিং হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া এটি পিষে রস করে রূপচর্চায় ব্যাবহার করা যায়। বোরহানির উপাদান হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয়।
পুদিনা পাতার উপকারিতা
কেবল খাবার হিসেবেই নয়, পুদিনা পাতার রয়েছে ভেষজ ও প্রসাধনি তথা রূপচর্চাগত উপকারিতা। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলোঃ
১. ব্রণ দূর করতেঃ ব্রণ দূর করতে
পুদিনা পাতা দারুণ উপকারি। ১০
থেকে ১২টি পুদিনাপাতা ছেঁচে
এক টেবিল চামচ লেবুর রসের
সঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি
করে নিন। এটি ব্রণ,
ব্রণ আক্রান্ত স্থান বা ব্রণের দাগের
ওপর লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা
করতে হবে। এরপর ঠান্ডা
পানি দিয়ে তা ধুয়ে
নিন। সপ্তাহে একবার এটা ব্যবহার করা
যায়।
২. ব্যাথা দুর করতেঃ ব্যথা দুর করতে পুদিনা পাতার
রস খুব উপকারী। তাই
মাথা ব্যথা বা জয়েন্টে ব্যথা
থেকে মুক্তি পেতে পুদিনা পাতা
ব্যবহার করা যায়। মাথা
ব্যথা হলে পুদিনা পাতার
চা পান করতে পারেন।
অথবা তাজা কিছু পুদিনা
পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। জয়েন্টে
ব্যথায় পুদিনা পাতা বেটে প্রলেপ
দিতে পারেন।
৩. মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ পুদিনা পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য মুখে
থাকা জীবাণু দূর করতে পারে এবং দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া
থেকে মুক্তি দেয়। এর ফলে পুদিনা পাতা নিঃশ্বাসকে সতেজ রাখে।
আরও পড়ুনঃ লেবুর খোসার উপকারিতা ও ব্যাবহার
৪. সর্দি-কাশিতে উপকারিঃ সর্দি হলে নাক বুজে যাওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার মতো মারাত্মক কষ্ট পান অনেকেই।
সেই সময় যদি পুদিনা পাতার রস খান, তাহলে এই কষ্ট থেকে রেহাই পাবেন নিমেষে।পুদিনা পাতায় থাকা পেপারমিন্টের
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ক্ষমতা সাধারণ সর্দি বা সংক্রামিত শ্লেষ্মার
বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। গলার
খুসখুসে ভাব ও কাশির
মতো সমস্যা প্রশমিত করতে পারে এক
কাপ পুদিনা চা।
আরও পড়ুনঃ ব্রকলি খাবার পদ্ধতি ও উপকারিতা
যাঁরা অ্যাজমা বা হাঁপানি এবং কাশির সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের তাৎক্ষণিক
উপশমে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকরী। খুব বেশি নিঃশ্বাসের এবং কাশির সমস্যায় পড়লে পুদিনা
পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে সেই পানির ভাপ নিতে পারেন। ভাপ নিতে অসুবিধা হলে গার্গল বা গড়গড়া করার অভ্যাস
তৈরি করুন।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফল খাবার পদ্ধতি ও উপকারিতা
৫.ক্যান্সার প্রতিরোধে পুদিনা পাতাঃ বিজ্ঞানীদের দাবি, পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধের
ক্ষমতা রাখে। পুদিনা পাতায় থাকা পেরিলেল অ্যালকোহল, যা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসের
একটি উপাদান দেহে ক্যান্সারের কোষ
বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।
৬. ব্রণ দূর করতেঃ ত্বকের তেলতেলে ভাব কমাতে ও ব্রণ
দূর করতে তাজা
পুদিনা পাতা বেটে ত্বকে
লাগান। দশ মিনিট রেখে
ধুয়ে ফেলুন। ব্রণের দাগ দূর করতে
প্রতিদিন রাতে পুদিনা পাতার
রস লাগান। সম্ভব হলে সারারাত রাখুন।
যদি তা করা সম্ভব না হয়, তাহলে
কমপক্ষে ২/৩ ঘণ্টা
রাখুন।
৭. উকুন দূর করতেঃ চুলে
উকুন এর উপদ্রব হলে পুদিনার শেকড়ের
রস লাগাতে পারেন। উকুনের মোক্ষম ওষুধ হল পুদিনার
পাতা বা শেকড়ের রস।
চুলের গোড়ায় এই রস ভাল
করে লাগান। এরপর একটি পাতলা
কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর
চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে অন্তত দু বার এটা
করুন। এক মাসের মধ্য
চুল হবে উকুনমুক্ত।
আরও পড়ুনঃ উকুন দূর করার উপায়
৮. শরীর ঠান্ডা করতেঃ গরমকালে
শরীরকে ঠাণ্ডা রাখাতে পুদিনার রস খুব উপকারি।
গোসলের আগে পানির মধ্যে
কিছু পুদিনা পাতা ফেলে রাখুন বা পুদিনা পাতা ফোটান পানি গোসলের পানিতে মিশিয়ে নিন।
সেই পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর ঠান্ডা থাকে।
৯. জীবাণুরোধি ক্ষমতাঃ পুদিনা পাতার রয়েছে জীবাণুরোধি ক্ষমতা। পুদিনা পাতায় থাকে প্রচুর পেপারমিন্ট তেল। বিজ্ঞানীরা
লিস্টেরিয়া এবং সালমোনেলার মতো
ব্যাকটেরিয়ার উপর পেপারমিন্ট তেল
পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, তেল
প্রয়োগের পরে এগুলোর বৃদ্ধি
বন্ধ হয়েছে। এসব ব্যাকটেরিয়া ত্বকের
সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস এবং আরও বেশ
কিছু রোগের জন্য দায়ী।
১০. শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ গরমকালে
শরীর থেকে হওয়া ঘাম এবং ব্যাকটেরিয়া-জনিত
বিশ্রী দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই
পেতে পুদিনা পাতা ব্যাবহার করতে
পারেন। পুদিনাতে রয়েছে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট নামক উপাদান, যা ঘামের দুর্গন্ধ, ঘামাচি এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।
শেষ কথাঃ পুদিনা পাতা । খাবার নিয়ম ও উপকারিতা
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিলো পুদিনা পাতা খাবার নিয়ম ও উপকারিতা নিয়ে। আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে শেয়ার করুন আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে।আপনাদের মূল্যবান মতামত জানান কমেন্ট সেকশনে। আর নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url