একজিমা এক ধরনের চর্মরোগ বিশেষ। বাংলায় এটি বিখাউজ, পামা বা কাউর ঘা নামে পরিচিত।
চিকিৎসা বিদ্যায় এটি "এটোপিক ডার্মাটাইটিস ( atopic dermatitis)" নামে পরিচিত।
এটি শরীরের যেকোন স্থানেই হতে পারে।
আমাদের আজকের পোস্টের আলোচ্য বিষয় একজিমা এবং এর কারণ ও প্রতিকার নিয়ে । আশা
করি এ বিষয়ে জানতে আমাদের পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
একজিমা কি
একজিমা এক ধরনের চর্মরোগ বিশেষ। “একজিমা” শব্দটি গ্রীক ভাষা থেকে উদ্ভূত যার অর্থ “সিদ্ধ করা বা ফোটানো”। একজিমা আক্রান্ত স্থানের চামড়া দেখলে মনে হয় যেন সে স্থানের চামড়া ফুটছে, এ
থেকেই এই নামকরণ বলে ধারণা করা হয়
।এইরোগেত্বকেরকোনকোনস্থানেপ্রদাহেরসৃষ্টিহয়।আক্রান্তস্থানলালচেদেখায়, এখানেপুঁজজন্মে, চুলকায়, রসক্ষরণহতেপারেএবংমামড়িপড়ে। একজিমা থেকেদীর্ঘমেয়াদীসমস্যাযাতেত্বক অতিশুষ্ক হয়েফেটেযায়, পুরুহয়েওঠে, চুলকানিরসৃষ্টিহয়এবং ত্বকে ফুস্কুড়িহতেপারে।
একজিমার লক্ষণ
একজিমার অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে চুলকানি। প্রথম দিকে আক্রান্ত স্থান লালচে হয়ে
উঠে এবং সেখানে চুলকানি হয়। আক্রান্ত স্থানে ছোট ছোট দানা দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে কয়েকদিনের মধ্যে ফুস্কুড়ির আকার ধারন করে।
চুলকানির ফলে ফুসকুড়ি গলে গিয়ে কষের মত নিঃসরন হয় এবং এ জায়গাটিতে সীমাবদ্ধ না
থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
একজিমার কারণ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজিমার উৎস বংশগত বলে ধারণা করা হয়। তবে এছাড়াও আরো কিছু কারণ
থাকতে পারে যা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
১. বংশগত কারনঃ বংশগত কারনে একজিমা হতে পারে। সাধারণত পুর্বপুরুষদের কারও
একজিমা থাকলে একজিমা হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
২. রাসায়নিকের প্রতি সংবেদনশীলতাঃ সাধারণত কোন বস্তু বা রাসায়নিকের প্রতি
সংবেদনশীলতা থেকে একজিমা হতে পারে।
৩. ত্বকের শুস্কতাঃ শীত বা তীব্র রোদ-গরমের মত কোন কারনে ত্বক অধিক
শুস্ক হয়ে গেলে সেখানে একজিমা দেখা দিতে পারে।
৪. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ কোন কোন ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া যেমন
এন্টি-বায়োটিক বা এজাতীয় ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় একজিমা দেখা দেয়।
৫. রোদের তাপেঃ যাদের ত্বক কিছুটা সংবেদনশীল তারা যদি সরাসরি রোদে
দীর্ঘক্ষণ থাকেন তবে তাদের একজিমা দেখা দিতে পারে।
৬. এলার্জিক প্রতিক্রিয়াঃ যাদের বিভিন্ন খাবার বা বস্তুর প্রতি এলার্জি
আছে তাদের এলার্জিক খাবার বা বস্তুর সংস্পর্শে এলে এলার্জিক প্রতিক্রিয়ায় একজিমা
দেখা দিতে পারে।
১০. ধুমপান ও মদ্যপানঃ ধুমপান ও মদ্যপানের ফলেও একজিমার প্রকোপ বৃদ্ধি
পায়।
১১. আদ্র পরিবেশঃ বর্ষা কালে বা যারা অতিরিক্ত আদ্রতাপূর্ণ পরিবেশে কাজ
করেন এবং প্রচুর পানির সংস্পর্শে থাকেন তাদের মধ্যে একজিমার প্রবনতা বেশি।
একজিমার প্রতিকার
একজিমার চিকিৎসা মূলত লক্ষণ ভিত্তিক। লক্ষণ-উপসর্গ দেখে ওষুধ ও প্রতিকার
দেয়া হয়। এছাড়া আরও কিছু চিকিৎসা দেয়া হয় যা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১. ত্বক আদ্র রাখাঃ শুস্ক ত্বকে একজিমা হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে । তাই
একজিমা আক্রান্তদের ত্বক আদ্র রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।
২. এলার্জিক খাদ্য ও বস্তু থেকে দূরে থাকাঃ এলার্জি একজিমার একটি অন্যতম
কারন। তাই যাদের একজিমার সমস্যা আছে, তাদের এলার্জি হয় এমন খাদ্য, পানীয়
এবং বস্তু থেকে দূরে থাকা উচিৎ।
৩. শ্যাম্পু ও ক্রিমঃ একজিমার চিকিৎসায় কিটোকিনাজোল গ্রুপের শ্যাম্পু এবং
ক্রিম দেয়া হয়, যা ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ব্যাবহার করা উচিৎ।
৪. এন্টি-হিস্টামিন জাতীয় ওষুধঃ যেহেতু একজিমার সাথে সম্পর্ক রয়েছে
এলার্জির তাই একজিমার চিকিৎসায় এন্টি-হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়।
একজিমা খুব সাধারণ একটি রোগ। তবে সময়মতো এবং সঠিকভাবে এর চিকিৎসা না হলে
এটি বেশ ক্ষতির কারন হতে পারে। আমাদের আজকের পোস্টের আলোচ্য সুচি ছিল
একজিমার লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার নিয়ে। আশা করি আমাদের
আজকের পোস্ট পড়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার
করুন আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আপনাদের মতামত জানান কমেন্ট সেকশনে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url