বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটি বৌদ্ধবিহার হচ্ছে সীতাকোট বৌদ্ধবিহার। নামের সাথে সীতা যুক্ত থাকলেও হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র সীতার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। বরং এটি সম্রাট অশোকের সময় তৈরী একটি বৌদ্ধবিহার।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় সীতাকোট বৌদ্ধবিহার কোথায় অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে চলে যাওয়া যাক মূল আলোচনায়।
সীতাকোট বৌদ্ধবিহার কোথায় অবস্থিত
বাংলাদেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১ কি.মি. পশ্চিমে বিরামপুরগামী রাস্তার উত্তর পাশে গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেপুর মৌজায় সীতাকোট বৌদ্ধবিহার অবস্থিত।
সীতাকোট বৌদ্ধবিহারের নামকরন
প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী, রামের স্ত্রী সীতাকে এখানকার গভীর বনে বনবাস বা নির্বাসন দেয়া হয়েছিল। সীতার এখানে থাকার জন্য একটি কুটির নির্মান করা হয়েছিলো। সীতার কুটির থেকে সীতাকোট নামের উদ্ভব বলে ধারণা করা হয়।
সীতাকোট বৌদ্ধবিহা্রের আবিস্কার
১৯৬৮ সালে এ.কে.এম জাকারিয়ার উদ্যগে জেলা পরিষদের অর্থায়নে এবং প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের কারিগরি সহায়তায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যের মাধ্যমে প্রথম এখানে বৌদ্ধবিহারের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে ১৯৭১ এবং ১৯৭২ সালে সীতাকোট বৌদ্ধবিহারে আরও খননের মাধ্যমে বেশ কিছু নিদর্শনের দেখা মেলে।
সীতাকোট বৌদ্ধবিহার এর বিবরণ
সীতাকোট বৌদ্ধবিহার এর আয়তন প্রায় এক একরের মত। প্রায় বর্গাকৃতির সীতাকোট বৌদ্ধবিহারের পরিমাপ পূর্ব-পশ্চিমে ৬৫ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৬৪ মিটার। বিহারটির উত্তর এবং দক্ষিণ বাহুদ্বয় বাইরের দিকে বর্ধিত ছিল। বিহারে প্রবেশের পথ ছিলো উত্তর দিকে।
কক্ষ সংখ্যাঃ বিহারটিতে মোট ৪১ টি কক্ষ ছিলো। উত্তর বাহুতে ৮ টি এবং বাকি তিন বাহুতে ১১ টি করে মোত ৩৩ টি। কক্ষগুলি ছিলো প্রায় সমান আয়তনের এবং পুরু দেয়াল বিশিষ্ট। কক্ষগুলির সামনের দেয়াল ছাড়া বাকি তিন দেয়ালেই প্রদীপ রাখার জন্য কুলুংগির ব্যাবস্থা ছিলো। দক্ষিণ দিকে মূল ভবনের সাথে পথ দ্বারা সংযুক্ত বারান্দাযুক্ত পাচটি কক্ষ পাওয়া যায়, যেগুলো শৌচাগার হিসেবে ব্যাবহার হতো বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত।
মন্দিরঃ বিহারেরদক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব দিকের বাহুর মধ্যবর্তি কক্ষ তিনটি অন্যগুলির চেয়ে বড়। এগুলি মন্দির হিসেবে ব্যাবহৃত হত। সম্ভবত দক্ষিণ দিকের কেন্দ্রিয় কক্ষটি ছিলো প্রধান মন্দির। প্রতিটি কেন্দ্রিয় কক্ষে একটি করে ইটের বেদি ছিলো, যা সম্ভবত পুজার মূর্তি রাখার কাজে ব্যাবহার হতো।
অন্যান্য বৌদ্ধবিহারের মত সীতাকোট বৌদ্ধবিহারে টেরাকোটা বা পোড়ামাটির ফলক আবিস্কৃত হয় নি।সীতাকোট বৌদ্ধবিহারের নির্মানে ব্যাবহৃত ইট ও অন্যান্য উপকরন দেখে অনুমান করা হয় এটি পঞ্চম শতাব্দিতে তৈরী। সে হিসেবে এটি প্রায় ১৫০০ বছরের বেশি সময় পুরাতন। তবে সুনির্দিষ্ট কোন শিলালিপি বা তাম্রশাসন/তাম্রলিপি না পাওয়া যাওয়ায় সীতাকোট বৌদ্ধবিহারের আসল নির্মানকাল জানা যায় না।
ব্রোঞ্জনির্মিত একটি বোধিসত্ত্ব পদ্মপানি এবং বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী বিগ্রহ সীতাকোট বৌদ্ধবিহার থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন। বিগ্রহ বা মূর্তি দুটির গঠন থেকে অনুমান করা হয়, এগুলি সপ্তম বা অষ্টম শতকে তৈরী।
সীতাকোট বৌদ্ধবিহার যাবার উপায়
দিনাজপুর কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল থেকে যেসকল বাস বগুড়ার দিকে ছেড়ে আসে সেগুলিতে করে বিরামপুর পর্যন্ত আসতে হবে অথবা সীতাকোট বৌদ্ধবিহার মোড়ে নামতে হবে। এখান থেকে অটো বা ভ্যানে করে সীতাকোট বৌদ্ধবিহার যাওয়া যায়।
শেষ কথাঃ সীতাকোট বৌদ্ধবিহার। কোথায় অবস্থিত ও কেন বিখ্যাত
আমাদেরআজকেরআলোচনারবিষয়ছিলোসীতাকোট বৌদ্ধবিহার কোথায় অবস্থিত ও কেন বিখ্যাত তা নিয়ে ।আমাদেরআর্টিকেলটিযদিআপনাদেরভালোলেগেথাকেতবেশেয়ারকরুনআপনাদেরসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে।আপনাদেরমূল্যবানমতামতজানানকমেন্টসেকশনে। আর নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url